• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১১ই কার্তিক ১৪৩২ সকাল ১১:৩৯:২৯ (26-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

পান থেকে চুন খসলেই সংঘর্ষ বাঁধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: পান থেকে চুন খসলেই সংঘর্ষ যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের নিত্যদিনের বাস্তবতা। আধিপত্যের লড়াই, পারিবারিক বিরোধ আর ক্ষমতার প্রভাব— সব মিলিয়ে এই জেলায় সহিংসতা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।এমনই এক তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে আবারও রক্ত ঝরল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিরামপুর গ্রামে। মৃত মায়ের মরদেহ দেখার সুযোগ না দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ বছর বয়সী নাছির উদ্দিন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।২৪ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে বিরামপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় পুরো গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হাতে দা, লাঠি, বল্লম ও টেঁটা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ। অনেককে হেলমেট, প্যাড ও লাইফ জ্যাকেট পরেও লড়াই করতে দেখা যায়— যেন কোনো ভয়ঙ্কর যুদ্ধক্ষেত্র।সংঘর্ষ চলাকালে চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। দাঙ্গাবাজরা গবাদিপশুও লুট করে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বিরামপুর গ্রামের মৃত হাসিম মিয়ার স্ত্রী মারা গেলে তার ছয় ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে দাফন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। বড় ভাইদের সিদ্ধান্ত ছিল— ছোট ভাই কুমিল্লা থেকে ফিরুক বা না ফিরুক, মায়ের দাফন সম্পন্ন হবে। এ নিয়েই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। পরে বিষয়টি পারিবারিক সীমা ছাড়িয়ে গ্রামের দুই প্রভাবশালী পক্ষ— হারুন চেয়ারম্যান ও সাচ্চু মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে জড়িতদের শনাক্তে কাজ চলছে।সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন সংঘর্ষ কেবল আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা নয়, বরং এটি সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন।ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বন্দে আলী বলেন, ‘পরিবারে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা হারিয়ে যাওয়াই এসব ঘটনার মূল কারণ। মানুষ এখন ক্ষুদ্র বিষয়েও সহিংস হয়ে উঠছে।’