• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই কার্তিক ১৪৩২ রাত ০২:৩৯:৪১ (26-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

প্রাণঘাতী জেনেটিক রোগের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলল বেক্সিমকো ফার্মা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিস্টিক ফাইব্রোসিস একটি বিরল কিন্তু প্রাণঘাতী জেনেটিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের গড় আয়ু খুব কম। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ এই রোগে ভুগছেন। যার মাত্র ৬০ শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয় হয় ও মাত্র ২৭ শতাংশ চিকিৎসা পান।মার্কিন প্রতিষ্ঠান ভার্টেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস উদ্ভাবিত ট্রিকাফটা (Trikafta) এই রোগের চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী ওষুধ। ওষুধটিতে ইলেক্সাকাফটার, টেজাকাফটার ও আইভাকাফটার এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়, যা রোগীর আয়ু ও জীবনমান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। তবে এই ওষুধের দাম অত্যন্ত বেশি হওয়ায় বিশ্বের খুব কম সংখ্যক রোগীই এই চিকিৎসার ব্যয় বহনে সক্ষম।এই প্রেক্ষাপটে, সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত শিশুদের মায়েরা বেক্সিমকো ফার্মার উৎপাদিত ট্রিকাফটা-এর জেনেরিক কপি ট্রিকো (Triko) রোগীদের হাতে পৌঁছে দিতে ‘কমিউনিটি পরিচালিত বায়ারস ক্লাব’ চালু করেছেন। তারা ২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অনুষ্ঠিত নর্থ আমেরিকান সিস্টিক ফাইব্রোসিস কনফারেন্সে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।ঘোষণায় জানানো হয়, বেক্সিমকো ফার্মার তৈরি ট্রিকো–এর মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় হবে বছরে শিশু প্রতি মাত্র ৬ হাজার ৩৭৫ ডলার, যেখানে মার্কিন কোম্পানিটির তৈরি ট্রিকাফটার খরচ বছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অর্থাৎ, ট্রিকাফটার দামে একজন শিশুর চিকিৎসার সমান খরচে ট্রিকো দিয়ে ৫৮ জন শিশুর চিকিৎসা সম্ভব হবে। ওষুধটি ২০২৬ সালের এপ্রিল নাগাদ সরবরাহ করা যাবে বলে জানানো হয়।সম্মেলনে ‘রাইট টু ব্রিদ’ গ্লোবাল ক্যাম্পেইনের নেত্রী, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ‘জাস্ট ট্রিটমেন্ট’-এর মুখ্য সমন্বয়ক এবং সিস্টিক  ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত এক শিশুর মা গেইল প্লেজার বলেন, ‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন, যার জন্য সারা বিশ্বের সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগী ও তাদের পরিবার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। আমরা দেখেছি, অনেক শিশু চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারিয়েছে, অথচ চিকিৎসার ব্যয় পুরোপুরি নাগালের বাইরে। আজ সেই দুঃসহ অবস্থার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে, ভুক্তভোগী রোগী ও সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সর্বতো উদ্যোগের ফলে বিলিয়ন ডলার কর্পোরেশনের সকল অসহযোগিতা এবং বাধা অতিক্রম করে এরকম একটি দুরূহ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।’বেক্সিমকো ফার্মার ট্রিকো–এর মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বছরে ১২ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার ও শিশুদের জন্য ৬ হাজার ৩৭৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ট্রিকাফটার দামের তুলনায় বহু গুণ কম।একই সঙ্গে কোম্পানিটি বেক্সডেকো নামে আরেকটি ওষুধ বাজারে আনছে, যা ট্রিকোর একটি উপাদান আইভাকাফটার-এর জেনেরিক সংস্করণ। এর দাম হবে প্রতি ট্যাবলেট মাত্র ৫ ডলার।বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) রাব্বুর রেজা বলেন, ‘বেক্সিমকো ফার্মা সবসময় নিত্য-নতুন ওষুধসহ ব্যয়বহুল চিকিৎসার রোগীদের জন্য সুলভ মূল্যে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। আমাদের লক্ষ্য শুধু ওষুধ তৈরি নয়, বরং মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো বিরল রোগের চিকিৎসা খুবই সীমিত এবং তা এতটাই ব্যয়বহুল যা বেশিরভাগ রোগীর সামর্থ্যের বাইরে। আমাদের তৈরি সাশ্রয়ী মূল্যের ট্রিকো সেই ব্যবধান ঘোচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’মালয়েশিয়াভিত্তিক গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ক (টিডাব্লিউএন), যুক্তরাজ্যের রোগীদের সংগঠন ‘জাস্ট ট্রিটমেন্ট’ এবং বিশ্বব্যাপী ‘রাইট টু ব্রিদ’ ক্যাম্পেইনের অনুরোধে অসহায় সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগীদের সাহায্যার্থে, একান্ত মানবিক বিবেচনায় বেক্সিমকো ফার্মা এই ওষুধ তৈরির উদ্যোগ নেয়।