• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ১৪ই কার্তিক ১৪৩২ দুপুর ০১:৫১:০৬ (29-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:

প্রাথমিক শিক্ষায় বাড়ছে বৈষম্য

জয়পুরহাটে শহরে শিক্ষার্থীর ভিড়, গ্রামে ফাঁকা শ্রেণিকক্ষ

২৯ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ১১:৩৪:৪১

সংবাদ ছবি

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাট জেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর ঢল নামছে, শ্রেণিকক্ষে জায়গা না পেয়ে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসছে। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। কোথাও কোথাও শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে বসে সময় অলস কাটাচ্ছেন আবার অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির কারণে পাঠদান বন্ধ থাকছে। এই বৈষম্য জেলার সার্বিক শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

Ad

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭১টি। বিদ্যালয়গুলোতে ৩৭১ জন প্রধান শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২৪৪ জন। সহকারী শিক্ষক পদ রয়েছে ২ হাজার ৭৬টি, কিন্তু কর্মরত আছেন ১ হাজার ৮৮০ জন। অর্থাৎ, ১২৭টি প্রধান শিক্ষক ও ১৯৬টি সহকারী শিক্ষক পদ এখনো শূন্য। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোনো শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য নেই।

Ad
Ad

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, জয়পুরহাট শহরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত চাপে গাদাগাদি হয়ে বসছে। জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৫১ জন। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতে তিনটি শাখা রয়েছে, কিন্তু বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ মাত্র ১৬টি। ফলে এক একটি শ্রেণিকক্ষে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসতে হয়। শুধু পঞ্চম শ্রেণিতেই শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫১ জন।

Ad

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী জানায়, তিনজনের বেঞ্চে কখনো চারজন, কখনো পাঁচজন বসতে হয়। এতে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করা যায় না, শিক্ষকের কথাও অনেক সময় স্পষ্ট শোনা যায় না। অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, শহরের বিদ্যালয়ে ভর্তি করলেও শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি হয়ে বসার কারণে পাঠে মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে তাদের সন্তানরা। ফলে প্রাইভেট টিউশনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সন্তোষজনক হলেও শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চের তীব্র সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে মাত্র একটি ওয়াশব্লক থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিড়ম্বনায় পড়েন। সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান জানান, বিদ্যালয়ে বেঞ্চ ও শৌচাগার সংকটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

শুধু জয়পুরহাট মডেল নয়, কালাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও ভিন্ন নয়। সেখানে ৩৪৩ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত ৯ জন শিক্ষক আছেন। তবে বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে, ফলে কোনো সাংস্কৃতিক বা ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায় না।

অন্যদিকে, গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। শিক্ষার্থীর সংখ্যা এত কম যে, অনেক শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা পড়ে থাকে। শ্রেণিকক্ষের অধিকাংশ বেঞ্চ খালি পড়ে থাকে, ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে, কোথাও কোথাও সীমানা প্রাচীরও নেই। বিদ্যালয়ের মাঠে স্থানীয়রা আলু ও ধান মজুত করেন, ফলে পাঠদান ব্যাহত হয়।

কালাই উপজেলার কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মাত্র ৭৮ জন, কিন্তু উপস্থিত থাকে তারও কম। কালাই উপজেলার কাথাইল গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১২৯ জন হলেও উপস্থিত থাকে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন। প্রধান শিক্ষক ওবায়দুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ ছুটির পর অনেক শিক্ষার্থী এখনো বিদ্যালয়ে ফিরেনি।

বড়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে দেখা গেছে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, মেলা শেষ হলেও শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার বিষয়ে এখনো উদাসীন।

করিমপুর সরকারি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। জানালার কাঁচ ভাঙা, ছাদের ফাটল থেকে পানি পড়ে, বেঞ্চও অপ্রতুল। প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, বারবার আবেদন করেও সংস্কারের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বামুনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, আজ শ্রেণিকক্ষে মাত্র ছয়জন শিক্ষার্থী এসেছে, বাকিরা বাড়ির কাজে ব্যস্ত বা বাইরে চলে গেছে। এমন অবস্থা প্রায়ই দেখা যায়।

অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, শিক্ষা অফিসের প্রশাসনিক কাজে নিয়মিতভাবে তাদের ডেকে নেওয়া হয়, যার ফলে শ্রেণিকক্ষে সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে পাঠদানে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রেও জয়পুরহাট এখনো পিছিয়ে আছে। সরকারি উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যত অনুপস্থিত। শহর ও গ্রাম কোনো বিদ্যালয়েই প্রোজেক্টর বা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করা হয় না। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এখনো খাতা-কলম ও ব্ল্যাকবোর্ডের ওপরই নির্ভর করতে হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ভালো মানের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ছে, আর যেখানে গাফিলতি আছে, সেখানে কমছে। কার্যকর নজরদারি ও সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে শহর-গ্রামের শিক্ষার বৈষম্য আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ



সংবাদ ছবি
খোকসায় ধীরে ধীরে কমছে সুপারি উৎপাদন
২৯ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২:৩৫:৫৭


সংবাদ ছবি
স্ট্রোকে অবহেলা করলেই বিপদ!
২৯ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২:১৯:২৬

সংবাদ ছবি
স্ট্রোকের পর ফিজিওথেরাপির গুরুত্ব
২৯ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২:১৭:৩৮

সংবাদ ছবি
আমতলীতে স্কুল শিক্ষককে অপহরণ করে নির্যাতন
২৯ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২:০১:০৩



সংবাদ ছবি
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনসিপি
২৯ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ১১:৩৭:০২


Follow Us